ঢাকাশুক্রবার, ২৪শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৬:৪৬
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ফেনীতে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ‘ফেনীর রাজা’ খ্যাত খাজা আহমদের ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত!

বিডি আলো ডেস্ক
মে ২৯, ২০২০ ১০:৩৬ অপরাহ্ণ
পঠিত: 113 বার
Link Copied!

আবদুল মজিদ, ফেনী সদর প্রতিনিধি-

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ‘ফেনীর রাজা’ খ্যাত খাজা আহমদের ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুমা মসজিদে দোয়ার মাধ্যমে মৃত্যুবাষিকী পালন করে পরিবারের সদস্যরা। ‘ফেনীর মুকুটহীন সম্রাট’ খ্যাত খাজা আহমদে ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।

 

১৯১০ সালের মার্চ মাসে ফেনী রামপুর সওদাগর বাড়িতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খাজা আহম্মদ। আপামর জনগণের বন্ধু খাজা আহমদ কিশোর বয়সেই পরাধীনতার নাগপাশ থেকে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য উৎসর্গকৃত একজন মুসলিম যুবনেতা রূপে আবির্ভূত হন। পাকিস্তান আন্দোলনের চরম মুহূর্তে ভারতীয় মুসলমানদের স্বাধিকার আন্দোলনে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেন।

 

স্বাধিকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে খাজা আহমদ ছিলেন প্রথম সারির নেতা। যুক্তফ্রন্টের তরফ থেকে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৭০ সালে এমএনএ নির্বাচিত হন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

মরহুমের পরিবার ও ফেনীর ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিনি ফেনী মডেল ও ফেনী হাইস্কুলে (বর্তমানে সরকারী পাইলট স্কুল) শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৩০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ঘোষিত ভারতের পৃথক স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে ১৯৩৪ সালে নোয়াখালী জেলা কৃষক সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৩৬ সালের খাদেমুল ইসলাম ব্যায়াম সমিতির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে সমাজসেবায় আত্ননিয়োগ করেন। ১৯৩৭ সালে ফেনীতে খাকছার আন্দোলন সংগঠন করেন। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং ফেনী শহর মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪১ সালে শ্যামা-হক মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করার অপরাধে প্রথমে তাকে স্বগ্রামে এবং পরে স্ববাড়িতে অন্তরীণ করা হয়। ১৯৪২ সালে তিনি ভারত রক্ষা আইনে গ্রেফতার হন। দুই বছর পর ১৯৪৪ সালে কারামুক্তি লাভ করেন।

 

১৯৪৬ সালে তার সম্পাদনায় ফেনী থেকে ‘সাপ্তাহিক সংগ্রাম’ নামে প্রগতিশীল পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৪৬ সালে তিনি বারাহিপুর ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫১ সালে নোয়াখালী স্কুল, ১৯৫২ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল বোর্ডের সদস্য, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য, ১৯৫৭ সালে জিলা স্কুল বোর্ডের সদস্য, ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

 

এদিকে ১৯৪৮-১৯৪৯ সালে অস্ত্র আইন ও ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৫০ সালে মূলনীতি আন্দোলন, ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের (ক) ধারার, ১৯৬০ সালে সামরিক আইনে, ১৯৬১ সালে সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারে মরহুম খাজা আহমদ কারাবরণ করেন। ১৯৬২ সালে কুখ্যাত শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের দাবিতে ফেনীর দুর্বার গণআন্দোলন শুরু করেন এবং পুনরায় পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে কারারুদ্ধ হন। ১৯৬৮ সালে জনৈক সরকারি কর্মচারী কর্তৃক জনৈকা মেয়ের শ্লীলতাহানির জন্য ওই কর্মচারীকে মারার অপরাধে পুনরায় কারাবরণ করেন।

 

মরহুম খাজা আহমদ ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান গণতন্ত্রী দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। খাজা সাহেব ফেনী মহকুমা ‘কপ’-এর এবং ১৯৬৪-৬৯ সালে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৬৩ সালে আওয়ামী লীগের পুনর্জীবনের সময় মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি মহকুমা রিকশাচালক সমিতি, বিড়ি শ্রমিক সমিতি, দোস্ত টেঙ্টাইল মিল শ্রমিক ইউনিয়ন, জাতীয় শ্রমিক লীগসহ বহু শ্রমিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। সমবায় আন্দোলনের পুরুধা হিসেবে ফেনী সমবায় ব্যাংকসহ অসংখ্য সমবায় প্রতিষ্ঠানের তিনি চেয়ারম্যান বা সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

একজন বিদ্যানুরোগী হিসেবে মরহুম খাজা সাহেব দীলপুর খাজা আহমদ উচ্চবিদ্যালয় ও রামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ফেনী সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, সহকারী পাইলট হাইস্কুলের সভাপতি এবং ফেনী কলেজ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ছিলেন।

১৯৭১-এর ২৬ মার্চ তার নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা ফেনীতে অবস্থানরত ১৪০০ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধ ফেনীতে শুরু হয়। ওই তারিখেই তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সচিন্দ্র লাল সিংয়ের সঙ্গে মুক্তিকামী বাঙালিদের পক্ষে যোগাযোগ স্থাপন করেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ফেনী এলাকা সর্বপ্রথম ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ মুক্ত হয়। মরহুম খাজা আহমদ ভারত সরকার এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য ব্যতিরেকে ৪টি রিক্রুটিং মরহুম খাজা আহমদ পূর্বাঞ্চল মুক্তিফ্রন্টের সদস্য, আঞ্চলিক মুক্তিফ্রন্টের অর্থ কমিটির চেয়ারম্যান, মুক্তাঞ্চলের পরিচালক ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ফেনীর খাজা আহমদ’র ভাগনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী জাহানআরা বেগম সুরমা গত সরকারের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

দৈনিক বাংলাদেশ আলো পত্রিকায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না