বিশেষ প্রতিনিধি : মনীষ সরকার
ঘটনার শুরু ৮০ দশকে স্থাপিত একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে । মসজিদটির অবস্থান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতগীড়ি গ্রামে । মসজিদটি তৎকালীন সময়ে ঐ এলাকার প্রাক্তন মেম্বার মরহুম ইয়াকুব আলী নির্মাণ করেছিলেন । যেটি ” সাতগীড়ি পূর্বপাড়া (মেম্বারবাড়ী) জামে মসজিদ” নামে পরিচিত । প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মসজিদটিতে ঐ সমাজের ৮৫ টি পরিবারের মধ্যে ৭৮/৮০ টি পরিবার নিয়মিত নামাজ অাদায় করে আসছেন ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতন বাংলাদেশেও কোভিড ১৯ এর সংক্রমন ঘটে । ফলে সারাদেশে অনেক মানুষ অসহায় হয়ে পরেন ।
সরকার অসহায় মানুষের জন্য বিভিন্ন খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা কর্মসূচী ঘোষনা করেন । ঘোষনাকৃত সে কর্মসূচীর আওতায়, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত “ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” দেশের সকল প্রতিষ্ঠিত মসজিদ এর ইমাম ও মোয়াজ্জীনদের জন্য মসজিদ প্রতি ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন । প্রতিটি উপজেলায় ইসলামী ফাউন্ডেশন এর সুপারভাইজররা এ তালিকা তৈরী করেন । যে তালিকায় সাতগীড়ি পূর্বপাড়া (মেম্বার বাড়ী) জামে মসজিদের নামে ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন ইসলামী ফাইন্ডেশন ।
টাকা উত্তোলন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বামনডাঙ্গা ইউঃপিঃ চেয়ারম্যান মোঃ নাজমুল হুদা গত ১ জুন তারিখে মসজিদ কমিটির সভাপতি মওলানা মোঃ ইকবাল হামিদকে একটি প্রত্যয়ন পত্র দেন । প্রত্যয়ন পত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দলিলাদী জমা দিয়ে সভাপতি গত ৬ জুন তারিখে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করেন । টাকা উত্তোলন করার পর সূচনা হয় মূল পর্বের ! টাকা উত্তোলনের পরের দিন (৭জুন) ইসলামী ফাউন্ডেশন সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সুপারভাইজর মোঃ রাশেদুল ইসলাম প্রামানিক সভাপতির মুঠোফোনে কল করে, উত্তোলিত টাকা ফেরত দিতে বলেন ! রাশেদুল ইসলাম বলেন, টাকা ফেরত না দিলে ঝামেলায় পড়বেন ! তাই বড় ধরনের ঝামেলা এড়াতে হলে, আপনাকে অবশ্যই টাকা ফেরত দিতে হবে ! গত ৮ জুন তারিখে সুপারভাইজর সভাপতিতে মোট তিনবার মুঠোফোনে কল করেন ! তিনি বলেন-আগামীকাল আপনি, মসজিদ কমিটির সম্পাদক, ফারাজেনসহ আরো ২/৩ জনকে নিয়ে অাসবেন । ইউ,এন,ও স্যার আপনাদেরকে ডেকেছেন । সভাপতি ইকবাল হামিদ সুপারভাইজরকে বলেন । ফারাজেন কে কেন সাথে নিতে হবে ? সেতো আমাদের সমাজ/জামাত ভুক্ত নন । এর পরেরদিন (৯জুন) সভাপতি মসজিদ কমিটির সদস্যসহ বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শমেস উদ্দীন বাবুকে নিয়ে উপজেলায় যান । তখন সুপারভাইজর তাঁদেরকে বলেন, টাকাটা মুফতি রমজান আলীকে (সাবেক মুয়জ্জীন) দিলে কোন ঝামেলা হবেনা ! এখানে উল্লেখ্য যে, মুফতি রমজান আলী বর্তমানে পাশের একটি কওমী মাদ্রাসায় মুহতামীন হিসাবে কর্মরত । আর সে জন্যই মসজিদ কমিটির কেউ মুফতি রমজানকে টাকা দিতে রাজী না হয়ে, উত্তোলিত টাকা ফেরত দেন ! যা গত ৯জুন তারিখে সুপারভাইজর রাশেদুল ইসলাম গ্রহন করেন !
এত্তসব ঘটনার পিছনের মূল নায়ক হলেন- সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত ইউ,এন,ও অফিসের অফিস সহকারী আঃ সামাদ ! যার গ্রামের বাড়ী একই গ্রামের হিরো বাজার নামক স্থানে । ইউ,এন,ও অফিসে চাকুরী করার সুবাধে সে খুব সহজে ইসলামী ফাউন্ডেশনে কর্মরত রাশেদেুল ইসলামের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন ! তার প্রভাবের কারনেই সুপারভাইজর রাশেদুল বরাদ্দকৃত ও মাদ্রাসা কর্তৃক উত্তোলিত টাকা ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছেন !
গতকাল রাশেদুল (১০জুন) ইসলামের সাথে মুঠোফোনে টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন-ইউ,এন,ও অফিসের সামাদ সাহেব বলেছেন ঐ সমজিদ কমিটিতে ঝামেলা রয়েছে ! আপনি টাকা ফেরত নেবার ব্যবস্থা করেন ! রাশেদুল বলেন, টাকা ফেরত চাওয়ার কথা ইউ,এন,ও স্যার বলেননি । তবে স্যার টাকা ফেরত নেবার বিষয়টি জানেন ।
আজ (১১জুন) সকালে সাতগীড়ি পূর্ব পাড়াস্থ মসজিদ এলাকায় বিষয়টি নিয়ে কথা হয়, ঐ এলাকার সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ মোঃ জাবেদ আলী (৯২/৯৩), মসজিদ কমিটির সভাপতি মওলানা ইকবাল হামিদ, সম্পাদক মোঃ আতিয়ার রহমান আতা, কমিটির সহ সভাপতি আঃ করিম, মসজিদের বর্তমান ইমাম মোঃ ইমান আলীসহ একই সমাজভুক্ত প্রায় ৫০/৫৫ জন মানুষের সাথে । সবাই অফিস সহকারী সামাদের বিরুদ্ধে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি, মসজিদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে হুমকি প্রদান । তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের হুমকি এবং পুলিশকে দিয়ে হয়রানী মূলক গ্রেফতার করার হুমকি প্রদান করেন ।
সাতগীড়ি পূর্বপাড়া মেম্বানবাড়ী জামে মসজিতে নামাজ অলাদায়কারী প্রতিটি মানুষ সামাদের হুমকি ও ভয় ভীতি থেকে রক্ষা পাবার জন্য সামাদকে শুধু অন্য জেলায় বদলি নয়, সামাদকে চাকুরী থেকে বরখাস্তের দাবী জানান । তাঁরা সামাদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গাইবান্ধার মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেন ।
পর্ব-২ এ থাকছে কে এই সামাদ ? তার বেড়ে ওঠার গল্প । একজন তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারীর এত প্রভাব, এত্ত প্রতিপত্তি ?
দৈনিক বাংলাদেশ আলো পত্রিকায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।