বাগমারা প্রতিনিধি রবিন ।
রাজশাহীর বাগমারার পূর্বের সবশেষ ইউনিয়ন যোগিপাড়া। এই ইউনিয়ন ঘেঁষে নাটোরের নলডাঙ্গা ও নওগাঁর আত্রাই উপজেলা। যোগিপাড়া ইউনিয়নের শেষ প্রান্তের গ্রামটির নাম বীরকুৎসা। এ খানে রয়েছে হাজার দুয়ারি জমিদারবাড়ি। সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই জমিদারবাড়ির অনেক কিছুই বেহাত হয়ে গেছে।
জমিদারবাড়ির পাশেই রয়েছে বীরকুৎসা রেলস্টেশন। ট্রেনে উঠে এই স্টেশনে নেমে ১০-১২ মিনিট হেঁটে অথবা অটোভ্যানে করে আসা যাবে এখানে। এই স্টেশনে সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই। নওগাঁর আত্রাই বা নাটোরের মাধনগর স্টেশনে নেমেও অন্য বাহনে করে পৌঁছানো যাবে আধঘণ্টার মধ্যে। এ ছাড়া বাসে করেও আসা যাবে। উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে নেমে অটোভ্যানে করে সরাসরি বীরকুৎসা হাজার দুয়ারি জমিদারবাড়িতে যাওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, জমিদারিপ্রথা চালু থাকাকালীন বীরকুৎসা ছিল একটি পরগনা। এর জমিদার ছিলেন ভারতের কাশী থেকে আসা বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বিরুবাবু। পার্শ্ববর্তী আত্রাই উপজেলার আমরুল ডিহি বিশার রাজা ছিলেন গোপাল ধাম। প্রভাতী বালা নামে তাঁর এক রূপসী কন্যা ছিলেন। রাজজামাতা হওয়ার সুবাদে বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও কন্যা প্রভাতী বালার নামে বীরকুৎসা পরগনা হস্তান্তর করেন রাজা গোপাল ধাম। প্রভাতী বালা ছিলেন খুবই শৌখিন। তাঁর পছন্দমতো স্বামী বিরুবাবু বীরকুৎসায় গড়ে তোলেন একটি সুরম্য অট্টালিকা। এর ছিল এক হাজারটি দুয়ার। এ কারণেই এটি হাজার দুয়ারি জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত।
পুরোনো ইটের গাঁথুনি, সুচারু কারুকাজ, খসে পড়া পলেস্তারা ও শেওলাগজানো দেয়াল চোখে পড়বে। ওপরে ও নিচে দেখা যাবে অসংখ্য দরজা। এখনো আছে সেগুনকাঠের কারুকার্যখচিত দরজা। দরজাগুলো তিন স্তরে আবৃত ছিল। প্রথম স্তর কাঠে, দ্বিতীয় স্তর লোহার গ্রিলে ও শেষ স্তর দামি কাচে আবৃত ছিল। এখন কাচের দরজা আর নেই। এর চিহ্ন দেখা যাবে শুধু।
এ ছাড়া এই অট্টালিকার পুরো মেঝে ছিল শ্বেতপাথরে ঢাকা। তবে বেশির ভাগ শ্বেতপাথর চুরি হয়ে গেছে। প্রাসাদের সামনের ফুলের বাগানে জমিদার পরিবার বিকেলটা কাটাত। এখন সেই বাগান নেই। ফুলের বাগানের পরিবর্তে সেখানে দোকানপাট। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাগান দখল করে দোকানপাট বানিয়ে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রাসাদের ভেতরের জলসাঘরে কলকাতা ভোলানাথ অপেরা এসে গানবাজনা করে যেত। পূর্ব দিকের দেউড়ির ২ দিকে ৬ জন করে ১২ জন বরকন্দাজ থাকতেন। দেউড়ির পাশে ছিল মালখানা ও এর কিছুদূরে ছিল মহাফেজখানা। এর চিহ্ন দেখা যাবে। এ ছাড়া প্রাসাদটির পাশে রয়েছে আরেকটি ছোট প্রাসাদ। সেখানে বসে খাজনা আদায় করা হতো। সেখানে এখন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যক্রম চলে।
দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে রেন্ট রোল অ্যাক্টের বলে জমিদারিপ্রথা বিলুপ্ত হলে বিশাল অট্টালিকা, জমিজমা, মূল্যবান জিনিসপত্র ফেলে বিরুবাবু সপরিবার ভারতে চলে যান। বিরুবাবুর ঘনিষ্ঠ সহচর বয়োবৃদ্ধ কালিপদ সরকার এখনো বীরকুৎসাতেই আছেন
দৈনিক বাংলাদেশ আলো পত্রিকায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।