প্রকাশ দেব চট্টগ্রাম।
হ্যালো…আমি সাংসদের এপিএস। স্যারের সাথে একটু কথা বলুন। কখনো এমপির কন্ঠ অনুসরণ করতেন। এভাবে মানুষের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে কৌশলে টাকা পাঠানোর কথাটি বলতেন। পরে তাদের ব্যবহৃত বিকাশ নম্বরে এসে যেতো টাকা। টাকাগুলো বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে উত্তোলন করে নিজেরাই ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিতেন। এভাবেই বেশ ভাল ভাবেই চলছিল প্রতারক চক্রের টাকা আদায়ের কৌশলটা। কিন্তু কথায় চোরের দশদিনতো গৃহস্তের একদিন।
এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। রাউজানে এসেই ফেঁসে গেলেন এই প্রতারক চক্রের দুজন। পরে তাদের দেওয়া তথ্যানুসারে তিনজনকে গ্রেফতারসহ ১০ হাজার টাকা, দুইশ পিস ইয়াবা, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম ও মোবাইল জব্দ করে তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করেছে রাউজান থানা পুলিশ। সোমবার দুপুরে রাউজান থানায় সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রবিবার রাতে রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের কাগতিয়া এলাকায় দুই যুবক নিজেদের রাউজানের সংসদ সদস্যের এ.পি.এস পরিচয় দিলে উপজেলা যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের আটকে রেখে রাউজান থানায় খবর দিলে রাউজান থানার ওসির নির্দেশে নোয়াপাড়া ফাঁড়ির পুলিশ রাতে দুই প্রতারককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
আটককৃতরা হলেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জাফর আহমেদের ছেলে মো. এহসানুল হক (২৬), চন্দনাইশ উপজেলার কঞ্চনপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র মো. নুরুল আলম প্রকাশ সুমন (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারের পর থানায় পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে দুজন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতারণা করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এহছানুল হক প্রকাশ হাসান আরো জানায়, প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ সুমনের স্ত্রী তারানা নাজ শবনম এর বিকাশ নম্বরে আসে। সেগুলো থেকে কিছু পরিমাণ অর্থের ভাগ পান সুমন ও তার স্ত্রী। হাসানের স্বীকারোক্তিমতে নগরীর ডবলমুরিং থানার পানওয়ালা পাড়ার তিন রাস্তার মোড়ে সুমনের ভাড়া বাসায় গিয়ে তার স্ত্রী তারানা নাজ শবনমের দেওয়া তথ্য মোতাবেক মোতাবেক পটিয়ার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের আশাতা গ্রামস্থ হাজী আহমদ সফার বাড়ির এহছানের ঘরের স্টিলের আলমিরায় রক্ষিত প্রতারণার ১০ হাজার টাকা জব্দ করে।
রাউজান থানা সূত্রে জানা গেছে, প্রতারক এহছানুল হক গত ১২ জুন রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নাম্বারে ফোন করে রাউজানের সাংসদের এ পি এস পরিচয় দেয়। পরে গ্রেফতারের পর এহছানুল হকের কাছ থেকে পুলিশের জব্দ করা সিমের নাম্বারের সাথে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাংসদের এপিএস পরিচয়ে করা ফোন নাম্বারটি মিলে যায়।
শুধু রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয় এহেছানুল বিভিন্ন সময়ে নানা কৌশলে এমপি, কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পরিচয় দিয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেপায়েত উল্লাহ সংবাদ সন্মলনে বলেন, রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ একাধিক সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে তাঁরা মানুষের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিতেন।
ওসি কেপায়েত উল্লাহ আরও বলেন, সংসদ সদস্যদের টার্গেট করে তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের এপিএস সেজে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করাটাই ছিল তাদের নেশা। সম্পর্কে তারা একে অন্যের আত্নীয়। প্রতারক এহসানের বিরুদ্ধে নগরীর সিএমপি’র কতোয়ালী থানা, পাঁচলাইশ মডেল থানা, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সদর থানা, এসএমপি’র কোতোয়ালি মডেল থানা, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও পটিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আটককৃত মো. এহসানুল হক, নুরুল আলম (সুমন) ও সুমনের স্ত্রী তারানা নাজ শবনমের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় মামলা রুজু শেষে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।
দৈনিক বাংলাদেশ আলো পত্রিকায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।