মনীষ সরকার রানা, বিশেষ প্রতিনিধি :
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত “কাটগড়া উচ্চ বিদ্যালয়”। ২০০৭ সালে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ ইউনুচ আলী প্রামানিক ।
দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই তাঁর নামে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে ! যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানকে আত্মীয় করনের !
বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারী হিসাবে মোট কর্মরত রয়েছেন ২৩ জন । যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ প্রধান শিক্ষক ইউনুছ আলী প্রামানিকের আত্মীয় হন !
২০১৫ সালের শেষ দিকে পদ শূন্য নাই জেনেও প্রধান শিক্ষক ইংরেজী বিষয়ের জন্য মোঃ শহিদুল ইসলামকে নিয়োগ দেন ! নিয়োগের প্রায় ৫ (পাঁচ) বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও এখনো বেতন ভুক্ত হয়নি বেচারা ! অতি কষ্টে নিদানিপাত করছেন বেচারা শহিদুল !
আজ বিকালে মুঠো ফোনে কথা হয় বিনা বেতনের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী) মোঃ শহিতুল ইসলামের সাথে । সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে, শহিদুল ইসলাম ,অন্তরে পাথর চাপা দিয়ে রাখা কথা গুলো বলতে গিয়ে আবেগাপপ্লুত হয়ে পরেন । তিনি বালেন, “বিগত প্রায় ৫ বছর যাবত শুধু নামেই ইংরেজীর শিক্ষক হয়ে আছি ! বন্ধের দিন ব্যতীত, প্রতিটি দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল চারটা/সাড়ে চারটা পর্যন্ত স্কুলে নিয়মিত ক্লাস নিয়েছি ! কোন দিনই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করিনি । হেড স্যারের (প্রধান শিক্ষক) কথা মতন, নিয়োগ থেকে শুরু করে এম,পি,ও ভুক্তি বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেছি । হেড স্যারের কথা মতন ্এম,পি,ও ভুক্তির জন্য দেশের মহামান্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেছি ! কিন্তু ফলাফল এখনো শূন্য !” !
কথা গুলো বলতে গিয়ে মোঃ শহিদুল ইসলাম আবেগাপপ্লুত হয়ে পরেন । তিনি জানান, এ যাবত যে টাকা গুলো ব্যয় করেছি ? সেগুলো অনেক কষ্টার্জিত টাকা । বিগত দীর্ঘ সময় যাবত বেতন না পেয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছেন তিনি ! শহিদুল ইসলাম আরো জানান, “হেড স্যার নাকি অনেকেই বলেন ? আমি নাকিচ এম,পি,ও ভুক্তির বিষয় ছাড়াই কাটগড়া হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেছি ! এমন মিথ্যাচার আমাকে আরো কষ্ট দেয় । বিনা বেতনে কেউ চাকুরী করে কি ? হেড স্যার আমাকে মিথ্যা আশ্বাসে নিয়োগ দিয়ে, আমার জীবনেনর সমস্ত সুখ-শান্তি শেষ করে দিয়েছেন ” !
তিনি বলেন, স্কুল থেকে অনিয়মিত ভাবে তাঁকে কোন মাসে এক হাজার আবার কোন মাসে দুই হাজার টাকা সম্মানী বাবদ দেয়া হয়েছে ! যে টাকা দিয়ে বর্তমান বাজারে/সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে এক মাস কেন ? এক সপ্তাহ চালানো দায় । তাঁর এম,পি,ও ভুক্তির পূর্বেই প্রধান শিক্ষক ইউনুছ আলী প্রামানিক আবসরে গেলে (৩১ ডিসেম্বর, ২০২০) ? তার এম,পি,ও ভুক্তির কি হবে ? পরবর্তীতে যিনি প্রধান শিক্ষক হবেন ? তিনি কি তাঁর এম,পি,ও ভুক্তির দায়িত্ব নিবেন ? এ প্রশ্ন গুলো তাকে খুব ভাবাচ্ছে বলে জানান শহিদুল ।
এদিকে চাকুরীর শেষ সময়ে/মাত্র দুই মাস পূর্বে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য । প্রধান শিক্ষক ইউনুছ আলী প্রামানিক জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট ডি,জি প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন ! যে বিষয়টিকে এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক ইউনুছ আলীর শেষ অনিয়ম/আত্মীয়করন মনে করেন । তাঁদের ধারনা, প্রধান শিক্ষক তাঁর আপন ছোট বোানকে ঐ পদে নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ! তাই এলাকাবাসীর পক্ষে উক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ডি,জি প্রতিনিধি না দেওয়ার জন্য, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট আবেদন করা হয়েছে । তাঁদের মতে, প্রধান শিক্ষক তাঁর আপন ছোট বোনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্যই বিগত ১২/১৩ বছরে নানান অপকৌশলে উক্ত পদটি শূন্য রেখেছিলেন !
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে যে, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত টীম গঠন করা হয়েছে । প্রধান শিক্ষক মোঃ ইউনুছ আলী প্রামানিকের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে । আগামী ১ নভেম্বর,২০২০ তারিখে তদন্ত টীম কাটগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আসবেন ।
দৈনিক বাংলাদেশ আলো পত্রিকায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।