সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
জামালগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বি জাহান বৃহস্পতিবার, রবিবার ও সোমবার
তিন দিন ছুটি না নিয়ে নিজ-নিজ এলাকায় চলে গেছেন। ৩ দিন ধরে এই দুই শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। দুই শিক্ষা কর্মকর্তা অনুপস্থিতর খবর পেয়ে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষক ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে উপজেলা সদরের চায়ের স্টলে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। শিক্ষা কর্মকর্তার দাফতরিক অফিস কক্ষে দপ্তরী সালেহ আহম্মদ কে উপস্থিত পেলেও তিনি তার স্যারদের (দুই শিক্ষা কর্মকর্তা) ব্যাপারে কোথায় আছেন কিছুই জানেননা বলে জানান।
করোনা ভাইরাস শুরু থেকেই এখনো উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন নিয়মিত অফিস করেননা বলে জানান বেশ কয়েকজন। তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার স্বাক্ষর করেই নিজ এলাকা গাজীপুর চলে যান। মন যে দিন চায় বাড়ি থেকে এসে এক সাথে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন তিনি। বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত তার কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায়। তিনি এই উপজেলা যোগদানের কিছুদিন পরেই স্কুল ফাঁকিবাজ অনুগত শিক্ষক আবুল লেইস, আশরাফ, রইসুজ্জামানসহ বেশ কিছু শিক্ষককে সাথে নিয়ে শিক্ষক বদলী, বিভিন্ন স্কুল বরাদ্ধে ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়নি তার। তিনি এখন বদলীর তদবির করছেন বলেও জানান অনেকেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলীর অনিয়মের ডিজিটাল কারসাজির অভিয়োগ উঠেছে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সিনিয়র শিক্ষকদের টপকে জুনিয়র শিক্ষকদের বদলীতে অনেক সিনিয়র শিক্ষকরা উৎকন্ঠায় রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন দুঃখ প্রকাশ করে জানান নিয়ম না মেনেই উৎকোচ নিয়ে জুনিয়র অনেক শিক্ষক কে বদলি করা হয়েছে। অবশ্য শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক বদলিতে, স্কুল বরাদ্ধের টাকায় নয়-ছয়, রুটিন মেইন্সটিজ অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ নতুন নয়। এ ছাড়াও খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ২০২০-‘২১ অর্থ বছরে ৭০ টি বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট খরচ বাবদ ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা (প্রতি বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৩ শ টাকা) বরাদ্ধ আসে। নিয়ম অনুয়ায়ী সরকারী বরাদ্ধের ওই টাকা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে জমা দেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষা কর্মকর্তা সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নামকাওস্তে কয়েক জন শিক্ষকে নিম্নমানের মোডেম ক্রয় করে দিলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে কোন মোডেম পায় নি বলে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের একাউন্ট নাম্বারে খোঁজ নিলেই এ সবের তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান একাধিক শিক্ষকগণ।
বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও একাধিক শিক্ষকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১৯-‘২০ অর্থ বছরে দুর্যোগ মোকাবেলায় ১২৬ টি বিদ্যালেয় ৫ হাজার টাকা করে মোট ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা সরকারী বরাদ্ধ আসে। নিয়ম অনুয়ায়ী সরকারী বরাদ্ধের ওই টাকা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে জমা দেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষা কর্মকর্তা সমুদয় টাকা নিজেই উত্তোলন করেন।
করোনায় স্কুল খোলার পর বিদ্যালয়গামী শিশু শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য ১২৬ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিটিতে থার্মাল স্কেল (শিক্ষার্থীদের তাপ মাপার যন্ত্র) ক্রয়ের বরাদ্দ আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ নিজ নিজ দায়িত্বে শিক্ষার্থীদের তাপ মাপার যন্ত্র ক্রয়ের উদ্যোগী হলে, শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন শিক্ষকদের বাঁধা দিয়ে তিনি নিজেই কোন এক কোম্পানির সাথে চুক্তি করে থার্মাল স্কেল নিয়ে আসেন। তার কাছ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের প্রতিটি ১৭ শত টাকা করে তাপ মাপার যন্ত্র ক্রয় করে নিতে বাধ্য করেন। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও অন্য শিক্ষকরা নীরবে চোখ বুজে তা সহ্য করছেন। অথচ শিক্ষা কর্মকর্তার বিক্রিত ওই তাপ মাপার যন্ত্র টি যাচাই করে জানা গেছে, এর বাজারমূল্য হবে ৬-৭ শত টাকা।
অফিসে আসলে বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করেনা। সভাপতি বিহীন মেয়াদোত্তীর্ন বিভিন্ন বিদ্যালয় এখনো চলছে প্রশ্নে তিনি জানান, আমি আমার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে একাধিকবার বলেছি মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো করার জন্য। তিনি অদৃশ্য কিছু কারনে এখনো তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এটা আমাদের ব্যার্থতা। তবে কিছুদিনের মধ্যেই উপজেলার সকল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো করা হবে।
জামালগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বি জাহানের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
জামালগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন বলেন, আমার চাকুরি মাত্র দুই বছরের মতো আছে, শরীরেও একটু অলসতা আসছে, বাড়িতে গেলে জামালগঞ্জ আসতে মন চায়না। আবার কর্মস্থল জামালগঞ্জ আসলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন ভাষায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সামনে অফিসে অনুপস্থিতির বিষয়ে বলেন। বাড়ি থেকে এসে এক সাথে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার বিষয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে অফিস করে গাজিপুর নিজ বাড়িতে যাই, সোমবার বিকেলে রাস্তায় আছেন বলে মঙ্গলবার অফিস করার কথা জানান।
ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) এস এম আব্দুর রহমান ভিডিও কলে জামালগঞ্জের দুই শিক্ষা কর্মকর্তা কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, দুই শিক্ষা কর্মকর্তা কেউই আমার কাছে ছুটি নেননি। কি কারনে তারা অফিসে অনুপস্থিত আমি ভিডিও কলে দেখলাম বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।বদলীর বিষয়ে বলেন সফটওয়্যারে আবেদনের মাধ্যমে বদলী হয়েছে। কোন দুর্নীতির অভিযোগ পাইনি। প্রথম পর্যায়ে হওয়া সফটওয়্যারে কোন সমস্যা থাকতে পারে পরবর্তীতে আরো সর্তর্কতা নিয়ে তা সমাধান হবে। তবে আমাদের কোন হাত নেই।
দৈনিক বাংলাদেশ আলো পত্রিকায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।